Saturday, September 12, 2020

আকীদাহ

ডা: আবদুল করিম


ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাসআর আকীদাহ শব্দের অর্থ ধর্ম বিশ্বাসঅর্থাৎ ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিশ্বাসআকীদাহ নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমে ঈমান নিয়ে আলোচনা করতে হবেঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস উমর রা: থেকে বর্ণিতক তিন বলেন, রসূল সা: বলেছেন, ঈমান হল বিশ্বাস স্থাপন করা আল্লাহ্‌র উপর, ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসুলগণ, কিয়ামত দিবস এবং নিয়তির ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস সুনানে আন-নাসায়ী  ঈমান এবং এর বিধানাবলী  ৪৯৯০ সহিহ মুসলিম  ঈমান  ৩৬১

 

এগুলো হল মৌলিক বিষয়এগুলো বিশ্বা না করলে ইমানদার হওয়া যায় না, ইসলামে প্রবেশ করা যায় নাআপনার বুঝে আসুক আর না আসুক এগুলোতে বিশ্বাস রাখতে হবে কিন্তু আকীদাহ মৌলিক বিষয় নয়আকীদাহ যদি বুঝে না আসে অসুবিদা নেইসব আকীদা মানতে হবে এমনও নয়সব কিছু বুঝতে হবে এমন নয় আপনার যেটার উপর বিশ্বাস আছে আরেক জনের তার উপর বিশ্বাস নেইএই মতবেধের কারণে কেউ জাহান্নামী হবে নাআল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় যারা বলে আল্লাহই আমার রব অত:পর অবিচল থাকে তারা জান্নাতিআহকাফ ১৩

 

যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারা জান্নাতের অধিবাসি সূরা বাকারার ৮২

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া অন্য পাপ”।নিসা ৪৮, ১১৬।

বুঝে আসার পর গোড়ামী করলে সে দায়দ্ধতা তার, অন্যের নয়।

আকীদাহর বিষয়টি ব্যপক বিশাল।আকীদাহর বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের মুসলিম সমাজে বিভক্তি রয়েছে। যেমন মর্যাদার দিক থেকে মুসলিমরা হযরত আবু বকর রা: কে সবার থেকে অগ্রগামী মনে করে। তার পর ওমর রা: তার পর ওসমান রা: তার পর আলী রা: তার পর অন্য সহাবী। কিন্তু শিয়াদের আকীদাহ হযরত আলী রা: এর মর্যাদা প্রথম তিন খলিফার উপরে। এটা তাদের দৃষ্টিতে ঠিক। আমি অন্তত এটাকে সমস্যা মনে করি না এবং এটা সমস্যাও নয়। সমস্যা হল তাদের অন্যান্য মতবাদের কারণে। তাদের সবাই কিন্তু একই মতবাদী নয়। যারা ঐসব ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাস করে নি:সন্দেহে তাদের ঈমানের ব্যপারে প্রশ্ন থেকে যায়। কিন্তু আমি তাদেরকে কাফের বা বাতিল বলতে পারি না।

 

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কোনো লোককে এমন দেখতে পাও যে, সে নিয়মতি মসজিদে আসে যায় এবং তার (মসজিদের) তত্ত্বাবধান ও খেদমত করে তখন তোমরা তার ঈমান আছে বলে সাক্ষ্য দেবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন- নিশ্চয়ই তারাই মসজিদসমূহের আবাদ রাখে; যারা আল্লাহ ও কেয়ামতের দিনের ওপর বিশ্বাস রাখে।’ (মিশকাত, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, দারেমি)

 

তাদের বিষয়টি আমি আল্লাহ তালার উপর ছেড়ে দিলাম। যাদের কাজ কর্ম ঈমানের দরজা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট তাদের কথা ভিন্ন।

 

কিছু বিষয় আমরা বিশ্বাস করি কিন্তু আমাদের বুঝে আসে না।বুঝে না আসাটা জ্ঞানের সীমাদ্ধতা। তবু আমরা বিশ্বাস করি। যেমন- রসূল সা: বলেছেন জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুন থেকে ৭০ গুণ বেশি, সর্ব শেষ জান্নাতিকে দশ পৃথিবর সমান জান্নাত দিবে, হাশরের মাঠের এক দিন দুনিয়ার ৫০ হাজার বছরের সমান। এগুলো আমরা বিশ্বাস করি কিন্তু কিভাবে তা আমাদের বুঝে আসে না। কবরের আযাব বিশ্বাস করি কিন্তু কিভাবে শাস্তি হবে তা বুঝে আসে না। রসূল সা: এর শাফায়াত, কেউ কেউ বলেন রাসূল শাফায়াত করতে পারবেন না। কিন্তু আমাদের আকীদাহ তিনি শাফায়াত করবেন।

 

কিছু লোকের আকীদাহ ঈমানদার কখনোই জাহান্নমী হবে না। জাহান্নাম শুধু কাফেরর জন্য। কিছু লোক বলে কবিরা গুনাহকারী জাহান্নমী হবে।

 

ইয়াযীদ আল ফাকীর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খারিজীদের একটি মত আমার মনকে দৃঢ়ভাবে কেড়ে নিয়েছিল। (কবীরা গুনাহকারী সর্বদা জাহান্নামে থাকবে, কখনো বের হবে না) (বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য লোকদের সাথে আলোচনা করাও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল)আমরা একবার একটি দলের সাথে হাজ্জে যাত্রা করিআমরা মাদীনাহ দিয়ে যাচ্ছিলাম, দেখি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) একটি খুঁটির পাশে বসে লোকদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করছেনবর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি জাহান্নামীদের আলোচনা তুললেনআমি বললাম, হে রসূলের সহাবাআপনারা এ কি বলছেন? অথচ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন : “যাকে আপনি অগ্নিতে নিক্ষেপ করলেন, তাকে তো আপনি নিশ্চয়ই হেয় করলেন” (সূরাহ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৯২)আরো ইরশাদ করেন : “যখনই তারা জাহান্নাম হতে বেরোবার চেষ্টা করবে তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে” (সূরাহ আস-সাজদাহ ৪১ : ২০)এ বিষয়ে আপনারা কী বলছেনজাবির (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কুরআন পাঠ কর? আমি বললাম, হ্যাঁতিনি বললেন, তাহলে তুমি মুহাম্মাদ (এর সম্মানিত) আসন, যেথায় আল্লাহ তাঁকে (কিয়ামাত দিবসে) সমাসীন করবেন, সে আসনের কথা শুন নি? বললাম, হ্যাঁজাবির (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সে আসনটি হচ্ছে “মাকামে মাহমূদ” যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা যাকে জাহান্নাম থেকে বের করার বের করবেনবর্ণনাকারী আরো বলেন, আলোচনাটি পুরোপুরি সংক্ষরণ করতে পারিনি বলে আমার আশঙ্কা হয়তবে তিনি অবশ্যই এ কথা ধারণা করেছেন যে, কতিপয় মানুষ কিছুকাল জাহান্নামে অবস্থান করার পর তাদেরকে বের করা হবেজাহান্নাম দগ্ধীভূত হয়ে যখন রোদে পোড়া তিল গাছের ন্যায় কালো বর্ণ ধারণ করবে, তখন তাদেরকে বের করে আনা হবেএরপর তারা জান্নাতের একটি নহরে নেমে গোসল করবেপরে সকলে কাগজের ন্যায় সাদা ধবধবে হয়ে সে নহর থেকে উঠে আসবেইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস নিয়ে আমরা আমাদের এলাকায় ফিরে এলাম এবং (সকলকে) বললাম, অকল্যাণ হোক তোমাদের! তোমরা কি মনে কর যে, এ বৃদ্ধ (জাবির) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর মিথ্যারোপ করতে পারেন? পরিশেষে আমরা সকলেই (ঐ ভ্রান্ত বিশ্বাস) থেকে ফিরে আসিআল্লাহর কসম মাত্র এক ব্যক্তি ছাড়া কেউ আমাদের এ সঠিক ‘আকীদাহ পরিত্যাগ করেনিআবূ নু’আয়ম এরূপই বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৩৬৯; ই.সে. ৩৮০) সহীহ মুসলিম ৩৬১।

 

কিছু মুসলিম মাযহাবের আকীদায় বিশ্বাসী কিছু মুসলিম লা মাযহাবী। মাযহাব মানা না মানা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার। কিছু লোক আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকীদায় বিশ্বাসী, কিছু লোক আহলে হাদিস। আপনি কোন আকীদায় বিশ্বাসী হবেন এটা আপনার ব্যপার।

এর পর আসি মিলাদ। কেউ মিলাদের পক্ষে কেউ বিপক্ষে। কেউ বলেন রসূল সা: হাজির নাজির কেউ তা বিশ্বাস করে না। কেউ বলেন রাসূল সা: হায়াতুন নবী কেউ বলেন মৃত। কেউ বলেন সাহবারা কবরে জীবিত কেউ বলেন মৃত। কেউ বলেন সাহাবাদের সমালোচনা করা যাবে না কেউ বলেন সাহাবারা ভুলের উর্দ্ধে নয়। কেউ বলেন রসূল সা: ভুলের উর্দ্ধে নয় কেউ বলেন রসূল সা: ভুল করেছেন এ কথা বললে ঈমান থাকে না। কেউ বলেন রাসূল সা: নূরের তৈরি কেউ বলেন মাটির। কেউ শবে বরাতে বিশ্বাসী কেউ তা মানে না। কেউ প্রস্রাব করে হাটাহাটিতে বিশ্বাসী কেউ এর বিরোধী। কেউ তাবলীগে বিস্বাসী কেউ তাবলীগের বিরোধী। কেউ ইসলামী আন্দোলনে বিস্বাসী কেউ বিরোধী। কেউ রাজতন্ত্রের পক্ষে কেউ বিপক্ষে। তালাক, এই তালাকের বিষয়ে দুই ধরণের মত রয়েছে। কেউ বলে এক সাথে তিন তালাক হয় না, তিন তালাক এক তালাক হিসাবে গণ্য হয়। আবার কেউ বলেন এক সাথে তিন তালাকই তালাক হয়ে যায়। কেউ বলেন পর্দার ক্ষেত্রে মহিলারা মুখ খোলা রাখতে পারবে, কেউ বলেন মুখ খোলা রাখা যাবে না। কেউ তারাবীহ আট রাকাতে বিশ্বাসী, কেউ বিশ রাকাত।

এভাবে আমরা আমাদের মনে অসংখ্য আকীদাহ বা বিশ্বাস লালন করি। কেউ পক্ষে কেউ বিপক্ষে। এই সব আকীদা বিশ্বাস জরুরী নয়। আপনি যে আকিদায় বিশ্বাস করে না কেন কোন অসুবিধা নেই।

 

ইসলামের মৌলিক বিষয় না হলে এমন কিছু বিষয় বা আকীদাহ বুঝে হোক না বুঝে হোক আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যদি আপনি নিজেকে মুসলিম দাবি করেন। কিছু আকিদাহ বিশ্বাস করা, মানা না মানা এটা একান্তই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যপার।এ বিষয়ে দলিল সহ পুরিপূর্ণ ব্যখ্যা করতে গেলে একটি বই হয়ে যাবে।তাই আলোচনা বাড়ালাম না। 

No comments:

Post a Comment

  চুলপড়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা                                                                              Homeopathic treatment to pre...